ক্রইম সন্ধান ডেস্ক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নে অভাবের তাড়নায় ৫০ হাজার টাকায় এক ছেলে সন্তানকে বিক্রি করেছেন মারুফা-লালন দম্পতি। এর আগেও আরেকটি সন্তানকে জন্মের পরই ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন এই দম্পতি।
জানা গেছে, মানুষের বাড়িতে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলে মারুফা আক্তারের (৩৫) সংসার। তার স্বামী লালন মিয়া দিনমুজুর। তাদের নিজেদের বাড়ি বা জমি নেই। অভাবের কারণে লালনের বাবা মৃত্যুর আগে নিজের বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। মারুফা-লালন দম্পতির ঘরে একে একে জন্ম নিয়েছে সাত সন্তান। গত সেপ্টেম্বরে সন্তান জন্মের ১৫ দিন পর নিজের নাড়িছেঁড়া ধনকে তুলে দিয়েছেন অন্যের হাতে। বিনিময়ে তারা পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা।
সরেজমিন দেখা যায়, অন্যের জমিতে একটি ঝুপড়ি ঘরে মারুফার চারপাশে ছোট ছোট পাঁচটি শিশু ঘিরে আছে। মাটিতে বসে শিশুগুলো বিভিন্ন পাত্রে ভাত খাচ্ছে সেদ্ধ লাউ দিয়ে। দেখে মনে হচ্ছে বাচ্চাগুলো দীর্ঘদিন ধরে কিছু খায়নি।
সন্তান বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে মারুফা বলেন, আমাদের কেউ নাই। অভাবে পড়লেই মানুষ গালি দেয়, লাথি দেয়। শিশুদের মুখে দুধ জোটে না। বিছনাপাতি নাই, মাডিত ঘুমাই। আর বুকের ভেতরে আগুন জ্বলে, তবুও কিছু করার নাই। এখন যখন সন্তান বিক্রি করেছি, তখন মানুষ গালি দেয়। আমরার পেটে যখন খাওয়া থাকেনা তখন কেউ এসে কিছু জানতে চায় না।
সন্তান বিক্রির বিষয়ে লালন মিয়া বলেন, এমন একটা অবস্থা ছিল নবজাতক ও বউ নিয়ে বিপদে পড়েছিলাম। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর বউ খুবই অসুস্থ হয়ে যায়। অন্যদিকে নবজাতক মারা যাওয়ার অবস্থা হয়। ভেবেছি ঘরে না খেয়, বিনা চিকিৎসায় ছেলেটা মরে যাবে। তাই বিক্রি করে দিয়েছি। কাগজ করে দিয়েছি করাণ কাগজ ছাড়া কেউ কিনতে চায় না।
বিষয়টি খুবই দুঃখজনক মন্তব্য করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনা নাসরিন বলেন, এক্ষেত্রে সরকারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শুরু করে বিভিন্ন এনজিও সঠিকভাবে কাজ করলে অযাচিত জন্মহার কমানো যেত। তারপরও এই পরিবারকে আর্থিক ও আশ্রয়ণের ঘর দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।