যৌনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে টেস্টোস্টেরন হরমোন

স্বাস্থ্য, 21 May 2025, 38 বার পড়া হয়েছে,

ক্রইম সন্ধান ডেস্ক

প্রকাশিত : ২১ মে ২০২৫ , ২৩:২৭

 

পুরুষের যৌন বৈশিষ্ট্যর জন্য দায়ী এ টেস্টোস্টেরন হরমোন। পুরুষদের মধ্যে এ হরমোনের হার নারীদের তুলনায় ২০ গুণ বেশি। টেস্টোস্টেরন হরমোন সম্পর্কে আমরা অনেকেই কিছুটা জানি, কিন্তু এই হরমোনটি আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা জানলে আপনি হয়তো অবাক হবেন। এটি শুধু পুরুষেরই নয়, নারীদেরও শরীরের জন্য অপরিহার্য। তবে, জীবনযাত্রার অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপানসহ বিভিন্ন কারণে অনেকের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়।

 

টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ
টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যাচ্ছে এটির লক্ষন নির্ভর করে বয়সের উপর। বাচ্চা বয়সে যদি টেস্টোস্টেরন হরমোনের অভাব দেখা দেয় তাহলে তার প্রজননতন্ত্রের অঙ্গগুলোর সঠিকভাবে বৃদ্ধি ঘটবে না। বয়সন্ধিকালে এর অভাব দেখা দিলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লোম দাড়ি ঠিকমতো উঠবে না এবং মাংসপেশী ও হাড়ের বিকাশ না হওয়ার লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে। এখন জানবো প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়ার কয়েকটি লক্ষণ –

 

প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের অন্ডকোষ সাধারণত লম্বায় ৫ সেন্টিমিটার, প্রস্থে ৩ সেন্টিমিটার এবং ওজনে ১০-১৫ গ্রাম হয়ে থাকে। তবে যদি কারো অন্ডকোষের আকার ছোট হয়, তা হতে পারে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতির লক্ষণ।

টেস্টোস্টেরন হরমোনের অভাবে পুরুষদের স্তনের আকার বৃদ্ধি পাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে, যাকে গাইনোকোমেশিয়া বলা হয়। এই হরমোনের ঘাটতির ফলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, কিছু মনে না রাখা, এবং অবসাদগ্রস্ততার মত লক্ষণ দেখা দেয়, যদিও খাওয়া-দাওয়া ঠিকঠাক থাকে।

টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি হলে পেটে চর্বি বেড়ে যায়, হাড় ও মাংসপেশির ঘনত্ব কমে যায়, এবং মাথার চুল পড়ে টাক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও বীর্যের পরিমাণ কমে যায় এবং শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত হয়, যার ফলে বীর্য পাতলা হয়ে যায় এবং সন্তান জন্মদানে সমস্যা দেখা দেয়।

 

লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যাও (ইরেক্টাইল ডিসফাংশন) টেস্টোস্টেরনের অভাবের একটি সাধারণ লক্ষণ। যৌন ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও লিঙ্গ শক্ত হয় না বা ইরেকশন ঠিকভাবে হয় না, এমনকি ঘুমের মধ্যেও ইরেকশন না হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

টেস্টোস্টেরন যৌনজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই হরমোনের অভাবে যৌন চাহিদা কমে যায়, যার ফলে যৌনমিলনে অনীহা, দ্রুত বীর্যপাত, এবং ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

 

টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির ব্যায়াম
টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করতে ব্যায়াম একটি অতি কার্যকরী পদ্ধতি। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বয়স বৃদ্ধির পরেও অনেক বেশি থাকে। টেস্টোস্টেরন শরীরে মাংসপেশি গঠনে সহায়ক, তাই এমন ব্যায়াম করা উচিত যা মাংসপেশি গঠনে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়েট লিফটিং, স্কোয়াট, ব্রেঞ্জ প্রেস, এবং দৌড়ানো প্রভৃতি ব্যায়াম বেশ উপকারী।

হাই ইনটেন্সিটি ইন্টারভাল ট্রেইনিং (HIIT): এই ধরনের ব্যায়ামও টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে সহায়ক। HIIT ব্যায়াম করতে হলে, সকালে ৬-৭ টার মধ্যে খোলা মাঠে ৩০-৬০ সেকেন্ড জোরে দৌড়াবেন এবং তারপর ১০-২০ সেকেন্ড বিশ্রাম নেবেন। এভাবে পুনরায় দৌড়াবেন। প্রতিদিন অন্তত ৫ মিনিট এই ব্যায়াম করুন। এর সাথে অন্যান্য ব্যায়াম মিলিয়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ব্যায়াম করলে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন: শরীরে টেস্টোস্টেরন এবং অন্যান্য হরমোনের মাত্রা ঠিক রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা জরুরি। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ মুক্ত থাকা প্রয়োজন। প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমের সময় নিশ্চিত করা উচিত।

সুতরাং, সঠিক জীবনযাপন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, এবং নিয়মিত ব্যায়াম শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা সঠিকভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে।

 

যেভাবে প্রতিরোধ সম্ভব:

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, যদি জীনগত কারণে, অণ্ডকোষে ক্ষতির কারণে অথবা হাইপোথ্যালামাস বা পিটুইটারি গ্রন্থিতে আঘাতের কারণে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যায়, তাহলে তার কোনো চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তবে কিছু জীবনযাত্রায় কিছু অভ্যাস পরিবর্তন বা সংযোজন করে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখা যায়। এগুলো হলো-স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা,ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা,অতিরিক্ত পরিমাণ অ্যালকোহল পান ও মাদক থেকে দূরে থাকা।

এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি ঠেকাতে হলে দৈহিক ওজন অবশ্যই কমাতে হবে। দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত গরম ও রেডিয়েশন থেকে দূরে থাকতে হবে। রেডিয়েশনে কাজ করতে হলে সুরক্ষা পদক্ষেপগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে যাতে ঝুঁকি কমে যায়।

চিকিৎসা কী?

টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি কমানোর কোনো একক চিকিৎসা নেই। এই হরমোন ঘাটতির চিকিৎসা আসলে উপসর্গ ভিত্তিক। এর মাত্রা ভিত্তিক নয়। তবে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির মাধ্যমে কিছু উপসর্গ কমিয়ে আনা যায়। যেমন যৌন তাড়না, বিষণ্নতার সাধারণ উপসর্গ এবং কাজে উৎসাহে ঘাটতির মতো উপসর্গ কমে আসতে পারে।

 

তাই এ ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। কারণ হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বিভিন্ন ধরনের হয় এবং এর অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে।

 

 

Hello world!

13 January 2025, 19304 বার পড়া হয়েছে,