ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবারই প্রথম ব্রি ধান-১০৪ বীজ 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 28 April 2025, 16 বার পড়া হয়েছে,
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবারই প্রথম ৩৬ একর জমিতে বীজ উৎপাদনের প্রদর্শনী হিসেবে কৃষি অফিসের সহায়তায় ব্রি ধান-১০৪ জাতের ধান রোপন করেছে কৃষকরা। ভালো ফলন হওয়ায় খুশি কৃষক ও কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা।

সরজমিনে সদর উপজেলার তালশহর পূর্ব ইউনিয়নের ধানসার গ্রামের মোহনপুর ব্লকে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তৃত এলাকা জুড়ে সবুজের সমারোহ। বাতাসের সাথে দোলছে কাচা ধান। সুগন্ধ ছড়াচ্ছে চারদিকে।এ যেনো এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।

প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল এন্ড বুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ এ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ফিল্ড টেকনোলজি ওরিয়েন্টেশন চলছে। মোহনপুর ব্লকে কমিউনিটি বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি প্রদর্শনী (বোরো) ব্রি ধান-১০৪ রোপন করা হয়েছে। জেলায় এবারই প্রথম এ জাতের ধান রোপন করা হয়েছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ব্রি ধান-১০৪ জাতটিতে আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। বাসমতির মতো ব্রির একমাত্র সুগন্ধি ধানের জাত ব্রি ধান-১০৪। কেননা এই জাতটি থেকে উৎপাদিত চালের আকার-আকৃতি অতিরিক্ত লম্বা ও চিকন। এ জাতের চাল ৭.৫ মিমি লম্বা এবং রং সঠিক মাত্রায় সাদা। এ ছাড়া এই জাতটিতে প্রতি হেক্টরে গড় ফলন দেবে ৭.২৯ টন। উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে হেক্টরে ৮.৭১ টন পর্যন্ত ফলন হতে পারে। ব্রি ধান-১০৪ এ আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এ জাতের ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা, পাতার রং সবুজ। পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ৯২ সে. মি.। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৭ দিন। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২১.৫ গ্রাম। এ জাতের ধান বাসমতি টাইপের তীব্র সুগন্ধী যুক্ত। এ ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৯.২ ভাগ। এছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮.৯ ভাগ এবং ভাত ঝরঝরে। ব্রি ধান-১০৪ এ রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম হয়।

সদর উপজেলার তালশহর পূর্ব ইউনিয়নের ধানসার গ্রামের মোহনপুর ব্লকের কৃষক মিজানুর রহমান জানান, কৃষি অফিসের উদ্বুদ্ধে এই ধান রোপন করা হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। এই ধান রোপনের জন্য কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ ও দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, প্রথমবারই ২ একর জমিতে এই ধান আবাদ করা হয়েছে। আশা করছি এই ধান রোপনে বেশ লাভবান হব। অনেক জায়গা থেকে এখনি কৃষক আসতেছে এই ধানের বীজ নিতে। আগামীতে আরো বেশি জমিতে এই ব্রি ধান-১০৪ রোপন করবো।

সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমেনা বেগম জানান, এ প্রথম সদর উপজেলার তালশহর পূর্ব ইউনিয়নের ধানসার গ্রামের মোহনপুর ব্লকে ব্রি ধান-১০৪ রোপণ করা হয়েছে। সুগন্ধিযুক্ত এই ধান চাষ এলাকায় কৃষকদের মাঝে সাড়া ফেলেছে। চিকন ধান হওয়ায় ফলন ও বেশি হয়। এই ধানের চাল বাজার মূল্য অনেক বেশি।

তিনি আরো জানান, এই ব্লকে আড়াই একর জমিতে এই ধান চাষ করা হয়েছে। আশা করি এই ধান রোপনের ফলে কৃষকরা ভালো লাভবান হবে।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম জানান, পার্টনার প্রোগ্রামের আওতায় সদর উপজেলায় দুটি ইউনিয়নের দুটি ব্লকে চার একর জমিতে ব্রি ধান-১০৪ রোপণ করা হয়েছে। ব্রি ধান-১০৪ জাতটি বাংলাদেশের ব্রি-৫০ বা বাংলা স্মৃতির উন্নত ভার্সন। এই ব্রি ধান-১০৪ জাতে অ্যারোমেটিক পদার্থ আছে, যে কারণে জমির পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই সুগন্ধ পাওয়া যায়। এটি সুগন্ধি জাত ও বাসমতি বৈশিষ্ট্য। এটি চিকন ও প্রিমিয়ার কোয়ালিটি। এই চালে প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় ২৯% ও রান্না করা ভাত ঝরঝরা হয়ে থাকে।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশে বিরিয়ানি রান্না করতে গেলে বিশেষ করে কাচ্চি বিরিয়ানিতে বাসমতি চাল ব্যবহার করা হয়। এই চাল প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত হয়। কিন্তু আমরা যদি আমাদের ব্রি ধান-১০৪ জাতের চাল ব্যবহার করি তাহলে কৃষকদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। পাশাপাশি বিক্রেতারা লাভবান হবে। এই চাল কৃষকেরা প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা ধরে বিক্রি করতে পারবে। ভালো করে জমির যত্ন নিলে হেক্টর প্রতি ৭.৩ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মইনুল হক সরকার জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় পার্টনার প্রকল্পে আওতায় নয়টি উপজেলায় ১৮ টি বিজ তলা উৎপাদন প্রদর্শনী করা হয়েছে। এই ব্রি ধান-১০৪ জাতটি সুগন্ধি জাত। এই চাল বাসমতির বিকল্প হিসেবে কাজ করবে, এটি প্রিমিয়াম কোয়ালিটি। এ চালের বাজার দর বেশি। ভারত ও পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে বাসমতি চাল আমদানি করা হয়। এই চাল ভালো করে উৎপাদন করতে পারলে, হয়তো বাহির থেকে যে সুগন্ধি চাল আমদানি করা হয় তা নির্ভরতা কমে যাবে। সারা দেশের মানুষের মাঝে চিকন চালের ভাত খাওয়ার প্রবণতা বেশি। মোটা ধানের পরিবর্তে এই ধান চাষে আগ্রহ বাড়বে। এবারই প্রথম জেলাতে ৩৬ একর জমিতে ব্রি ধান-১০৪ আবাদ করা হয়েছে।

Hello world!

13 January 2025, 11359 বার পড়া হয়েছে,