চীনের প্রস্তাবিত হাসপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া হওয়ার দাবী

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, 18 April 2025, 24 বার পড়া হয়েছে,
এহসানুল হক : চীন সরকার বাংলাদেশে তিনটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। চীন সরকারের সহায়তায় নির্মিতব্য এই ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালগুলো দেশের স্বাস্থ্যখাতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের বার্তা বয়ে আনবে বলেই আশা করা যায়। তবে এই হাসপাতালগুলোর অবস্থান নির্ধারণে কিছু মৌলিক নীতিগত বিষয় বিবেচনায় আনা জরুরি-অর্থনৈতিক অবদান, জনসংখ্যার চাপ, ভৌগোলিক কৌশলগত গুরুত্ব এবং দীর্ঘদিনের বঞ্চনা। এই প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ব্রাহ্মণবাড়িয়াই হতে পারে এই হাসপাতালগুলোর মধ্যে একটি স্থাপনের জন্য সবচেয়ে যৌক্তিক ও ন্যায্য স্থান।কারণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা স্বাধীনতার আগে থেকেই দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রেখে আসছে। ১৯৫৬ সাল থেকেই তিতাস গ্যাস ফিল্ড এই জেলার রাজস্ব আয়ের প্রধান ভিত্তি এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। এরপর এসেছে ফরেন রেমিটেন্স: দেশের শীর্ষ ৩-৪ জেলার মধ্যে  ফরেন রেমিটেন্সে অন্যতম জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যার অভিবাসীরা মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা ও মালয়েশিয়ায় শ্রম ও দক্ষতায় বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন।এছাড়া রেলের টিকিট বিক্রিতে দেশের সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণকারী স্টেশনগুলোর একটি হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশন।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় রয়েছে ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান প্রবেশপথ এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিমুখী স্থলবন্দর।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে রয়েছে স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবহৃত শুল্ক আদায়ের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এই বিশাল অর্থনৈতিক অবদানের পরও ব্রাহ্মণবাড়িয়া আজও একটি পাবলিক মেডিকেল কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বঞ্চিত।ভৌগোলিক ও কৌশলগত অবস্থান থেকে বিচার বিশ্লেষণ করলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শুধুমাত্র একটি জেলা নয়—এটি একযোগে চারটি বিভাগের (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ) সঙ্গে সংযুক্ত গুরুত্বপূর্ণ মিলনস্থল। এছাড়া এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোর প্রবেশদ্বার হিসেবেও ব্যবহৃত হয় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে।
এই জেলার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর, সিলেট অঞ্চলের পাথর ও চা, ময়মনসিংহের কৃষি এবং ঢাকার নগরায়িত কাঠামোর মধ্যে এক সরাসরি সংযোগ গড়ে ওঠে। তাই একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল এখানে স্থাপন করা হলে শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া নয়, এই চার বিভাগ এবং পার্শ্ববর্তী ভারতের রাজ্যগুলোর জন্যও এটি একটি স্বাস্থ্য-নির্ভর কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ। একক জেলা হিসেবে এটি অত্যন্ত জনবহুল এবং প্রতিনিয়ত একটি বড় অংশ স্বাস্থ্যসেবার জন্য রাজধানী বা সিলেটমুখী হয়ে পড়েন। জেলার ভেতরে থাকা প্রাইভেট হাসপাতালগুলো  প্রতিদিন হাজার হাজার রোগীদের  কিছুটা সেবা দিলেও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন চিকিৎসা এখনো কল্পনাতীত।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার স্বাস্থ্য-ভোগ্য খাত বিশাল এবং এর কনজিউমার ক্যাপাসিটি অত্যন্ত উচ্চ। এখান থেকে প্রতিবেশী কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ জেলার মানুষ সরাসরি চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন। এছাড়া ভারতের ত্রিপুরা থেকেও রোগী আসার সুযোগ রয়েছে। তাই এখানে হাসপাতাল স্থাপন হলে তা একটি আন্তর্জাতিক হেলথ হাবে পরিণত হতে বাধ্য।ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেবল একটি জেলা নয়-এটি একটি অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি, একটি কৌশলগত অবস্থান, একটি বঞ্চিত জনপদ, এবং একটি সম্ভাবনার নাম। চীনের সহায়তায় নির্মিতব্য তিনটি আন্তর্জাতিক হাসপাতালের একটি যদি এই জেলায় স্থাপিত হয়, তাহলে তা হবে একটি সুবিচারের বহিঃপ্রকাশ, একটি বাস্তবতার স্বীকৃতি, এবং একটি আগামীর বিনিয়োগ।সরকার এবং সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনাকারী মহলের কাছে বিনীত অনুরোধ-ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে শুধু উপযুক্ত নয়, সর্বোত্তম স্থান হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হোক।

Hello world!

13 January 2025, 11018 বার পড়া হয়েছে,